বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। দুই মাস পরপর ঋতু বদল হয়, সাথে বদল প্রতিটা ঋতু সাজ-সজ্জা । প্রকৃতির বুকে ক্রমান্বয়ে ঘুরতে থাকে এই ছয় ঋতু । ঘুরতে ঘুরতে একসময় শীত আসে সবুজ ছায়ায় ঘেরা বাংলার বুকে। হেমন্তের শেষদিকে ফসল ভরা সবুজ, হলুদ মাঠ যে সময়ে রিক্ত হয়ে ওঠে, সেই সময়ে ঘন কুয়াশার চাদরে মুখ ঢেকে শীত আসে এ বাংলার মাঠে-ঘাটে, অলিতে-গলিতে। শীত যেন ধীরে ধীরে জেকে বসে রিক্ত মাঠে, গ্রামে ও শহরে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে নদী অববাহিকার উত্তরবঙ্গ, সিলেট ও উপকূলীয় এলাকায় কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা আরও বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ পারভিন জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শীত পুরোপুরি জেঁকে বসতে পারে। এর আগ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা কমে আসার কারণে শীত অনুভূত হবে। খুলনায় শীত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে অনুভূত হতে শুরু করবে এবং ডিসেম্বরের শুরু থেকে তাপমাত্রা কমে মাঝামাঝি সময়ে পুরোপুরি জেঁকে বসতে পারে।
শীত মানে স্কুল ছুটি। শীত মানে দাদা বাড়ি, নানা বাড়ি। শীত মানে গ্রামের রংবেরঙের টাটকা সবজি। শীত মানে দাদি, নানি হাতে গরম গরম ধোঁয়া উঠা কয়েক রকমের পিঠাপুলি। শীত মানে একসাথে বাসে করে দূরে পিকনিকের জন্য দিতাম পাড়ি। এই গুলো আমার ছোট বেলায় গল্প। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে সমাজের একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে এখন আর নানা বাড়ি দাদা বাড়ি যাওয়া হয় না। চুলার পাশে আসে নানান রকমের পিঠাপুলি তৈরি করতে দেখা হয় না। পরিবারের সবার সাথে পিকনিক যাওয়াও এখন কমে গিয়েছে অনেকটা।
কিন্তু হ্যা এখনকার শীতটা আমাদের জন্য একটু অন্য রকম। এখন শীত মানে বন্ধুদের সঙ্গে দূরে কয়েকদিনে জন্য সময় কাটাতে যাওয়া, ঘন কুয়াশায় রাত জেগে ছাদে বারবিকিউ পার্টি করা, বন্ধুরা কয়েক দিন পর পর হাস দিয়ে পিকনিক করা।
শীত ঋতুটাই অন্য রকম।শীত ছোট বেলায় গল্পের মতো আর বড় হয়ে স্বপ্নে মতো। শীত সত্যিই বড় অদ্ভুত এক ঋতু। এই ভাবেই খুলনা গেজেটের কাছে মন ভাব প্রকাশ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজিয়া সুলতানা।
নগরীর ময়লাপোতার বাসিন্দা তুহিন মোল্যা খুলনা গেজেটকে বললেন, গ্রামের মতো শহরে এখনো শীত জাকিয়ে বসতে পারেনি। তবে ভোর রাতে একটা মোটা কাথা লাগে আর ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়া সময় হালকা চাদর। দিনের প্রশস্ততাও কমেছে অনেক। এখনই এই ঠান্ডা। মনে হয় এইবার গতবারের থেকেও বেশি ঠান্ডা পড়বে। প্রকৃতির রূপ বোঝা যাচ্ছে না। কয়দিন আগের নামাজ পড়ে হাটাহাটি করতে ভালো লাগতো। কিন্তু এখন একটা পাতলা চাদর ছাড়া নামাজ শেষে বাইরে থাকলে ঠান্ডা বোঝা যাচ্ছে । কিন্তু নামাজের শেষে হালকা বাতাসে দুই-দশ কদম পথ হাটতেও বেশ ভালোই লাগছে।
তুহিন আরও বলেন, বাজারে শীতের টাটকা সবজি খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে। আর যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তার দামও অনেক বেশি, মধ্যবিত্তদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি শীতের সবজিতে বাজার সয়লাব হবে এবং মধ্যবিত্তদের নাগালে পৌঁছাবে।
ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের আরশনগর গ্রামের সরকারি চাকরিজিবি শরিফ রায়হান মিলন বলেন, সকালে খুব বেশি কুয়াশা নেই, কিন্তু মোটামুটি ঠান্ডা পড়েছে। অন্য বারের তুলনায় এইবার বৃষ্টি বেশি হওয়ার কৃষকরা সময় মতো ফসল লাগাতে পারেনি। মাঠ থেকে শীতের ফসল তেলা এখনো শুরু হয়নি। শীতের আগম হলেও কৃষকরা জোর কদমে শীতের ফসল লাগানোর শেষ সময় পার করছেন।
তবে হ্যা খুব সামান্য পরিমাণে কৃষকরা লালশাক, পালংশাক, শিম ও টমেটো তুলে বাজার জাত করতে শুরু করেছে। মহান আল্লাহর রহমতে আবহাওয়া যদি কৃষকদের অনুকূলে থাকে তাহলে একটু দেরিতে হলেও কৃষকরা আশানুরূপ ফসল উৎপাদন করতে পারবে। তাছাড়া শীত আসলে গ্রামের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফুটে। তার অন্যতম কারণ শীতের বিভিন্ন ফসল। এই ঋতুতে মাঠ ভরা বিভিন্ন ফসল থাকে সব কৃষকের হাতে কাজ থাকে। দিন শেষ প্রতিটি কৃষক তার পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।
খুলনা গেজেট/এইচ